আরাফার দিন: ইসলামে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন, ফজিলত ও করণীয় আমল
![]() |
আরাফার দিন ২০২৫ - ইসলামের পবিত্র দিন, রহমত ও মাগফিরাতের উৎসব |
আরাফার দিন কী?
আরাফার
দিন হলো ইসলামের অন্যতম
গুরুত্বপূর্ণ দিন। এটি জিলহজ
মাসের ৯ তারিখে পড়ে
এবং হজ পালনকারীদের জন্য
সবচেয়ে পবিত্র দিনের মধ্যে একটি। আরাফার ময়দানে হাজিরা এই দিন ওকূফ
(অবস্থান) করেন, যা হজের অন্যতম
রুকন। নবী করিম (সা:)
বলেছেন,
“হজ হলো আরাফা।”
(সুনান আবু দাউদ: ১৯৪৯)
অর্থাৎ,
আরাফার দিন হজের প্রাণ
ও মূল ভিত্তি। এই
দিন আল্লাহর রহমত সর্বোচ্চ মাত্রায়
বর্ষিত হয়। যারা হাজে
যেতে পারেন না, তাদের জন্য
এই দিন রোজা রাখা
একটি মহান আমল।
আরাফার
দিনের ইতিহাস ও তাৎপর্য
আরাফা
নামটি এসেছে আরাফাত ময়দানের নাম থেকে, যেখানে
হাজিরা একত্রিত হয়ে আল্লাহর কাছে
নিজেদের দোয়া ও তাওবা
করেন। ইতিহাস বলছে, এই ময়দান থেকে
নবী ইব্রাহিম (আ:) এবং তাঁর
পুত্র হজরত ইসমাইল (আ:)
কাফনের মতো জামা পরে
একান্ত দোয়া করতেন, যা
আজকের হাজিদের আদর্শ।
আরাফার
দিন আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের দিন।
এই দিনে মন থেকে
আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া
হয় এবং নিজ গুনাহের
পাপ মোচনের আশা রাখা হয়।
আরাফার
দিনের ফজিলত ও গুরুত্ব
১.
আরাফার দিন আল্লাহর রহমতের
সর্বোচ্চ বর্ষণ
রাসুল
(সা:) বলেছেন:
“আরাফার দিনে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন।”
(সহিহ মুসলিম: ১৩৪৮)
এই
ফজিলত বোঝায় যে, আরাফার দিন
আল্লাহর কাছে ক্ষমার দোয়ার
সবচেয়ে বড় সময়।
২.
আরাফার দিনে রোজার গুরুত্ব
যারা
হাজে যেতে পারেন না,
তাদের জন্য আরাফার দিনের
রোজা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসুল (সা:) বলেছেন:
“আরাফার দিনের রোজা বিগত বছর ও আগামীর বছর গুনাহ মাফ করে দেয়।”
(সহিহ মুসলিম: ১১৬২)
এটা
দুই বছরের গুনাহ মাফ হওয়ার একটি
বড় সুযোগ।
৩.
কুরআন থেকে আরাফার দিনের
গুরুত্ব
আল্লাহ
তাআলা বলেন:
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পূর্ণাঙ্গ করলাম, আমার নিয়ামত তোমাদের ওপর সম্পূর্ণ করলাম।”
(সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত:
৩)
এই
আয়াতটি আরাফার ময়দানে নাজিল হয়, যা আরাফার
দিনের বিশেষ মর্যাদা প্রমাণ করে।
আরাফার
দিনে করণীয় আমল
আরাফার
দিন শুধু ওকূফের দিন
নয়, বরং সকল মুসলমানের
জন্য বিভিন্ন সুন্নত ও আমল পালন
করার দিন।
১.
রোজা রাখা
যারা
হাজে যান না, তারা
আরাফার দিনে রোজা রাখতে
পারেন। এর ফজিলত দুই
বছরের গুনাহ মোচনের।
২.
তাকবিরে তাশরীক বলা
জিলহজ
মাসের ৯ (আরাফার দিন)
থেকে ১৩ (ঈদ পর্যন্ত)
পর্যন্ত সকাল থেকে সূর্যাস্ত
পর্যন্ত নামাজের পরে ও অন্য
সময়ে বেশি বেশি
“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ”
পড়া সুন্নত।
৩.
দোয়া ও যিকির
আরাফার
দিন দোয়ার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। নবী করিম (সা:)
বেশি বেশি দোয়া করতেন
এবং বলেছেন:
“আরাফার দিনের দোয়া সবচেয়ে উত্তম দোয়া।”
(তিরমিযি: ৩৫৮৫)
প্রিয়
দোয়া:
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শরীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু, ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর।”
অর্থ:
আল্লাহ ছাড়া কেউ উপাস্য
নয়, তিনি এক ও
অদ্বিতীয়, তাঁর রাজত্ব ও
প্রশংসা সার্বভৌম এবং তিনি সবকিছুর
উপর ক্ষমতাশালী।
৪.
কুরআন তিলাওয়াত ও নফল নামাজ
আরাফার
রাতে নফল নামাজ, বিশেষ
করে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া অত্যন্ত সুন্নত।
কুরআন পড়া, দরুদ শরিফ
পাঠ ও অন্যান্য ইবাদত
বৃদ্ধি করা উচিত।
৫.
তাওবা ও ক্ষমা চাওয়া
আরাফার
দিন আল্লাহর কাছে অন্তরের সমস্ত
দোয়া ও তাওবা নিবেদন
করা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এটি আত্মশুদ্ধির দিন।
নারীদের
জন্য আরাফার দিনে করণীয়
নারীরা
এই দিনে বাড়িতে বসেই
যিকির, দোয়া ও কুরআন
পাঠ করতে পারেন। পরিবারের
সদস্যদের ইসলামী শিক্ষা দেয়া এবং দরিদ্রদের
সাহায্য করা ভালো আমল।
নারীদের জন্য আরাফার দিনের
বরকত ও রহমত সমান।
আরাফার
দিনের সামাজিক ও মানসিক গুরুত্ব
আরাফার
দিন আমাদের আত্মবিশ্লেষণ, গুনাহ থেকে ফেরার ও
আল্লাহর রহমত পাওয়ার সুযোগ
দেয়। একসঙ্গে হাজারো মানুষ আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে দোয়া করায় এক
অদ্ভুত একতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ
জন্মায়।
মানসিক
চাপ ও দুঃখ-কষ্ট
থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি সেরা দিন।
মানুষ এখানে আল্লাহর কাছে নিজের সব
কষ্ট ও বিপদ বিনিময়
করার সুযোগ পায়।
আরাফার
দিনের ইতিহাস থেকে শিক্ষা
নবীগণ
এ দিন তওবা করে
নিজেদের পাপ মোচনের জন্য
আল্লাহর কাছে ফিরে আসতেন।
আমাদেরও উচিত নিজ জীবনের
ভুল-ত্রুটি স্বীকার করে আল্লাহর কাছে
ক্ষমা চাওয়া।
আরাফার
দিন পালন করার সেরা
উপায়
·
সকাল
থেকে সারা দিন তাকবির
ও যিকির
·
বেশি
বেশি দোয়া ও কুরআন
পাঠ
·
রোজা
রাখা (যারা হাজে নেই)
·
নফল
নামাজ পড়া
·
নিজের
গুনাহ ক্ষমার জন্য আন্তরিক তাওবা
·
অসহায়
ও দরিদ্রদের সাহায্য
·
পরিবারের
সদস্যদের সাথে ভালো আচরণ
উপসংহার:
আরাফার দিনকে কাজে লাগাও
আরাফার দিন হচ্ছে আমাদের জন্য আল্লাহর কাছ থেকে রহমত ও মাগফিরাত পাওয়ার সেরা সুযোগ। এই দিনকে উদযাপন করো হৃদয়ের গভীরতা থেকে। খালি সময় নষ্ট করো না, বরং ইবাদত ও দোয়ায় নিজেকে সমৃদ্ধ করো।আজ থেকেই আরাফার দিনের আমল শুরু করো। নিজের ও পরিবারের জন্য দোয়া করো। এই লেখাটি তোমার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করো যেন সবাই এই মহান দিনের বরকত থেকে উপকৃত হয়।
পরামর্শ
·
হালাল
খাবার খাও
·
চোখ-কান-জিহ্বাকে গুনাহ
থেকে রক্ষা কর
·
বেশি
বেশি দোয়া কর — নিজের,
পরিবার, উম্মাহর জন্য
·
পোস্টটি
অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করো
No comments