দোয়ার শক্তি ও গুরুত্ব | The Power of Du'a in Islam
দোয়া: এক অন্তরের আর্তনাদ
ইসলামে
দোয়া
শুধুমাত্র কিছু
শব্দের
উচ্চারণ নয়—এটি একটি মুমিন
বান্দার আন্তরিক আকুতি।
এটি
আল্লাহ্র সাথে
সরাসরি
যোগাযোগের মাধ্যম। মুসলিম
জীবনে
দোয়া
হলো
এমন
এক
উপহার,
যার
মাধ্যমে বান্দা
আল্লাহ্র দরবারে
নিজের
সব
চাহিদা,
কষ্ট,
আনন্দ
এবং
আশাগুলো ব্যক্ত
করতে
পারে।
দোয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?
আল্লাহ্ আমাদের
সৃষ্টি
করেছেন,
আমাদের
প্রয়োজনও তিনি
ভালো
জানেন।
তবুও
তিনি
বলেছেন—তোমরা চাইবে, আমি
দিবো।
কুরআনে আল্লাহ্ বলেন:
وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي
أَسْتَجِبْ لَكُمْ
“আর
তোমার
প্রতিপালক বলেন,
‘তোমরা
আমাকে
ডাকো,
আমি
তোমাদের ডাকে
সাড়া
দেবো।’”
– সূরা
আল-মু’মিন (৪০:৬০)
এই
আয়াতটি
প্রমাণ
করে
যে,
আল্লাহ্ নিজেই
দোয়া
করার
নির্দেশ দিয়েছেন এবং
এর
প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
রাসূল (সা.) দোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে কী বলেছেন?
“দোয়া ইবাদতের মূল।”
– সহিহ
তিরমিজি, হাদিস:
৩৩৭১
“যে ব্যক্তি আল্লাহ্র কাছে
কিছু
চায়
না,
আল্লাহ্ তার
ওপর
রাগান্বিত হন।”
– সহিহ
তিরমিজি, হাদিস:
৩২৯৫
এই
হাদিসগুলো স্পষ্ট
করে
দেয়,
দোয়া
করা
ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত এবং
আল্লাহ্ পছন্দ
করেন
যারা
তাঁর
কাছে
প্রার্থনা করে।
দোয়ার মাধ্যমেই নির্ধারিত হয় ভাগ্য
হাদিসে
এসেছে:
“দোয়া হচ্ছে
তাকদির
পরিবর্তনের মাধ্যম।”
– সহিহ
মুসলিম,
হাদিস:
২৭৩৬
যদিও
তাকদির
নির্ধারিত, কিন্তু
কিছু
বিষয়
দোয়ার
মাধ্যমে বদলে
যেতে
পারে।
বিশেষ
করে
বিপদ,
রোগ,
দুঃখ—এগুলো থেকে মুক্তি
দোয়ার
মাধ্যমেই আসে।
দোয়ার ধরণ
🔹 ১. ইবাদতমূলক দোয়া
নামাজ
শেষে
বা
ইবাদতের পর
আল্লাহ্র প্রশংসা করে
দোয়া।
🔹 ২. প্রয়োজনভিত্তিক দোয়া
রোগ,
রিজিক,
হেদায়েত, বিপদ
থেকে
মুক্তি
চাওয়া।
🔹 ৩. দোয়া মাজমু’আ (সুন্নাহ দোয়া)
রাসূল
(সা.)
যেসব
দোয়া
করেছেন,
সেগুলো
নিয়মিত
করা।
দোয়া কবুল হওয়ার শর্তসমূহ
- হালাল
রুজি খাওয়া:
হাদিসে বলা হয়েছে, হারাম রুজি দোয়া কবুলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। - অন্তর
দিয়ে চাওয়া:
শুধু মুখে নয়, মন থেকে বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করতে হবে। - ধৈর্য
রাখা:
দোয়া কবুল না হলে হতাশ হওয়া যাবে না।
যেসব সময় দোয়া দ্রুত কবুল হয়
- তাহাজ্জুদের
সময়
- জুমার দিনের শেষ মুহূর্ত
- আজান ও ইকামতের মাঝখানে
- রোযা রাখার সময় ও ইফতারের সময়
- আরাফার দিন
- মুসাফির অবস্থায়
কিছু বিশেষ দোয়া ও অর্থ
- رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ
“হে আমার প্রভু! আমাকে এবং আমার পিতামাতাকে ক্ষমা কর।”
– সূরা ইসরা (১৭:২৪) - اللَّهُمَّ اشْفِ مَرْضَانَا
“হে আল্লাহ! আমাদের অসুস্থদের সুস্থতা দান কর।” - رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا
“হে আমার প্রভু! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি কর।”
– সূরা ত্বোহা (২০:১১৪)
যখন দোয়া কবুল হয় না: তখন কী করবো?
হাদিসে
এসেছে,
মুমিন
যখন
দোয়া
করে,
তা
তিনভাবে কবুল
হয়:
- সে যা চায়, তা পায়।
- তার চেয়েও ভালো কিছু দেয়।
- কোনো বিপদ দূর করে।
“তোমরা দোয়া
করো,
তবে
কবুল
হওয়ার
তাড়াহুড়া কোরো
না।”
– সহিহ
বুখারি,
হাদিস:
৬৩৪০
আল্লাহ্র কাছে কীভাবে চাইবো? – দোয়ার আদব ও নিয়ম
- দোয়া শুরু করতে হবে আল্লাহ্র
প্রশংসা এবং রাসূলের উপর দরুদ পড়ে।
- দুই হাত তুলে দোয়া করা সুন্নাহ।
- কিবলার দিকে ফিরে থাকা উত্তম।
- দোয়ার আগে তওবা করা হৃদয় কোমল করে।
আলেমদের মতামত
ইমাম
ইবনে
তাইমিয়া (রহ.)
বলেছেন:
“দোয়া মুমিনের হাতিয়ার, যার
দ্বারা
সে
বিপদের
মোকাবেলা করে
এবং
অনুগ্রহ লাভ
করে।”
ইমাম
গাজ্জালি (রহ.)
বলেন:
“দোয়া সেই
নৌকার
মতো,
যা
বান্দাকে মঞ্জিলে পৌঁছায়।”
বর্তমান সময়ে দোয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি কেন?
আমরা
এমন
এক
যুগে
বাস
করছি,
যেখানে
নিত্যদিন পরীক্ষায় পড়ছি—দুনিয়াবি দুশ্চিন্তা, ফিতনা, শত্রুতা, মানসিক
চাপ
ইত্যাদি। এসব
থেকে
রক্ষা
পেতে
আমাদের
সবচেয়ে
বড়
অবলম্বন দোয়া।
প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়া যুগে দোয়ার চর্চা কীভাবে বাড়াবেন?
- দোয়ার অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।
- দিনের বেলায় নির্দিষ্ট
সময় নির্ধারণ করুন (যেমন: ফজরের পর ৫
মিনিট)।
- ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে
দোয়া নিয়ে পোস্ট/স্টোরি শেয়ার করুন।
- পরিবারে একসাথে দোয়া করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
দোয়া ও আত্মশুদ্ধি – একে অপরের পরিপূরক
যে
বেশি
দোয়া
করে,
তার
হৃদয়
নরম
থাকে।
অহংকার,
গর্ব,
গিবত,
হিংসা
দূর
হয়।
নিয়মিত
দোয়া
আত্মশুদ্ধির জন্য
এক
অনন্য
মাধ্যম।
এই
লেখা
যদি
তোমার
হৃদয়
ছুঁয়ে
থাকে,
তবে
আজই
সময়
— একটু থেমে, হাত তুলে দোয়া করার।
জীবনের
কষ্ট,
দুশ্চিন্তা, চাওয়া-পাওয়া—সবই যে
দরজায়
গিয়ে
বলা
যায়,
সে
দরজা
হলো
আল্লাহ্র দরজা।
তুমি আজ কী চাও আল্লাহ্র কাছে?
তালিকা
বানাও,
নিয়ত
করো,
এবং
এখনই
দোয়া
করো।
No comments